টুকুনগল্প

আঙুরলতাকে নিয়ে একটা পোস্টমর্ডান গল্পের প্রচেষ্টা

আঙুরলতাকে নিয়ে আমি অনেক ভাবি। অনেক অনেক গল্প আমার চিন্তা করা হয়েছে তাকে নিয়ে। কিন্তু লেখা হয়ে ওঠেনি। আগে একটা আবছা আবছা চেহারা আমার মাথায় ছিল। ইদানীং ঝামেলা হয়ে গেছে। নামটা মাথায় আসলে সাথে সাথে জয়া আহসানের চেহারা মনে পড়ে। নাটকটা কিভাবে যেন দেখা হয়ে গেছে। আমার আঙুরলতা কিংবা আঙুরলতাকে নিয়ে একটা পোস্টমর্ডান গল্পে জয়া আহসান হানা দিলে গিয়ানজাম লেগে যায়। গল্প তার পাখা নিয়ে তার ডানা উড়িয়ে দূরে সরে পড়ে।

আমি যখন চুপে বসে থাকি আঙুরলতা উঁকি মারে। আঙুরলতা এক স্বাভাবিক মেয়ে। একজন মানুষ মেয়ে। তার ডিভোর্স হয়েছে কিংবা হয়নি। তার স্বামী আছে বা নেই। সে গুলশানে থাকে কিংবা পট্টিতে থাকে। তার ব্যাপারে যে কোন স্বতঃসিদ্ধ ধরে আমি কাহিনী বসাতে পারি। একটু একটু করে খোলসা করতে পারি তার পেখম। তার জড়তা। শোক। মায়াজাল। তার উড়তে শেখা। ডানা কেটে খোজা করে দেয়া। কিন্তু জয়া আহসান তার যাবতীয় প্রোপাগাণ্ডা নিয়ে ঝাঁপিয়ে আমার গল্পের গলা চিপে ধরে।

আঙুরলতার কেউ নেই। স্বামী মরে গেছে। মারার আগে অনেক মেরে গেছে। তার উঠোনে বসে অপেক্ষা করে এক রক্তাক্ত রোদ। সেখানে শকুনরা জড়ো হয়ে মন্ত্র পড়ে। বলে- এসো আঙুরি, অবগাহন করো আমাদের ছায়ায়। হতে পারে।

আঙুরলতার স্বামী আছে। সোহাগ করে খুব। ভালোবাসার সময় তাকে অন্য নামে ডাকে। নদী। আঙ্গিনা। সারা। সোমা। রিতা। আঙুর তার কণ্ঠে, তার কিন্নর ঝংকারে বার্তা পায় মৃতের।মৃত্যুর। অধিকার হারানোর। হতে পারে।

আঙুরলতা বুড়িয়ে গেছে। বুড়ো আর নেই। ছেলে আছে এবং নেই। তার চর্মসার দেহে ধমনী বেশ আস্তে ধীরে রক্ত পাচার করে। তার উঠোন পুড়ে গেছে। কণ্ঠে মাতম আছে। সুর তাচ্ছিল্য করে সুঠাম কর্কশ হয়ে গেছে সে বহুকাল। হতে পারে।

আঙুরলতা আজ বিকালে সবুজ ডুরে শাড়ি পড়ে যাবে কোন মেঘবালকের কাছে। আজ তার আত্মসমর্পনের দিন। দুর্বা দিবে। পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে আজ তার উদ্ধোধন হবে সশরীরে। পরে সব শেষ হয়ে গেলে দক্ষিণা নিয়ে সে ফিরে যাবে তার ম্লান দ্বীপে। রাত্রি নেমে আসবে আরেকটু বেশি রাত করে। হতে পারে।

আঙুরলতা আজ বৃষ্টিতে ভিজে নেয়। পৃথিবী তার মৃত্যুর আগে আজ শেষ বর্ষণ করে। আঙুরলতা তার ডানা পাখা পেখম নিয়ে স্নান করে উজ্জ্বল রোদে। শান্ত হয়। দাবানল নিভে যায়। হতে পারে।

আঙুরলতা তার ছোট্ট আনন্দ নিয়ে একটি পাখি পোষে। দানা দেয়। পাখি খুঁটে খায়। একটু পানি চুমুক দিয়ে দিয়ে খায় অজস্রবার। আঙুরলতা খুশি হয়। কিছুকাল পরে পাখি মারা যায় তার অপাখিত্ব শোক নিয়ে। আঙুরলতা রোদন করে। হতে পারে।

আঙুরলতা আজ এক কেজি আপেলের বদলে ভুল করে এক কেজি আঙুর নিয়ে ঘরে ঢোকে। প্যাকেট খোলার পর এক একটি আঙুর তার উপবৃত্ত শরীরে পরিহাসের দিকে তাকায় তার দিকে। আঙুরলতা কেঁপে ওঠে।হতে পারে।

আঙুরলতা আজ অমরত্ব পাবে। আজ তার শোকসঙ্গীতে বিউগল বাজাবে অনেক গোত্রপতি। আঙুরলতা আজ স্থিতু হবে। আজ দুরন্ত হয়ে দৌড় দিয়ে হাঁফাবে, হাঁফাতে থাকবে আমাদের অজস্র আঙুরলতা। তাও হতে পারে।

আরো অনেক কিছু হতে পারে। আঙুরলতা তার নাম তার একটু একটু করে বিচ্ছিন্ন প্রতিটা বর্ণ আমাকে ক্লান্ত করে দেয় গল্পের রাজ্যে। আ ঙু র ল তা … নবোকভের লোলিতার মতো কখনো সে বালখিল্য হাসি হাসে। কিংবা ধেয়ে আসে ফোকলা দাঁতে। তার মুখের গভীরের গর্তে আমার দেখা হয়ে যায় অন্তহীন কৃষ্ণফুটোর। কলম ঠিকঠাক ধরে কাগজে লিখতে গেলেই সাদা পৃষ্ঠায় আবার জয়া আহসানকে দেখি। আঙুরলতা সরে যায়।তাকে নিয়ে একটা পোস্টমর্ডান গল্প ফের মারা পড়ে।