টুকুনগল্প

আমি কেন আরব বিপ্লবীদের সমর্থন করি

সকালে ঘুম থেকে ওঠা হলেও বিছানা ছাড়তে দেরি হয়। অক্লেশে নানা কিছু মাথায় আসে। এমনকি দিয়ার কথাও। দিয়া আমায় ছেড়ে যাবার পরে বিছানায় ফাঁকাটুকুন মাঝে মধ্যে ভোগাতো। এখন সব ঠিক। আরো কিছুক্ষণ শুয়ে এপাশ ওপাশ করি। পরে উঠি। বাথরুম করতে গিয়ে হাগা কষা মনে হলে বিকালে প্রুন জুস কেনার কথা ভাবি। দাঁত মাজতে গিয়ে আয়নায় দেখতে পাই একটা ব্রণ না ফোঁড়া নাকের নিচে জখমি চেহারা নিয়ে নির্বিকার বসে। চিবে চিবে দেখলেও ব্যথা ঠিক মালুম হয় না।

চায়ের পানি বসিয়ে টিভি খুলে বসি। টু অ্যান্ড আ হাফ ম্যানের পুরানো সিজন। অ্যাসটন কুচারকে বিড়বিড় করে গাল পাড়ি। পুরানো সিজেনের দুটো পর্ব দেখতে দেখতে চা সাথে গারলিক ব্রেডে কামড় দেই। চ্যানেল পালটে দিতেই গাদ্দাফির মৃত্যুর সংবাদ। ন্যাটো হামলায় আহত গাদ্দাফিকে বিদ্রোহীরা আটক করে। পরে তার মৃত হয়ে যাবার খবর ছড়ায়। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা গ্রাফিকালি ভায়োলেন্ট কিছু ফুটেজও দেখানো হয়। আহত রক্তাক্ত গাদ্দাফি। তারপর একসময় মৃত গাদ্দাফি। বিয়াল্লিশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বর্বর নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকের উৎখাতে লিবিয়ার জনগণের উল্লাসের ছবি সিএনএন বিরতিহীনভাবে দেখাতে থাকে। আমি এসব ভুলে সমুদ্রের কথা ভাবি। দিয়ার কথা, সন্দীপণের উপন্যাসের গলানো পিচের ওপর ছেঁচড়াতে থাকা কষে রক্ত নিচে কিচকিচ করা সেই আশাবাদি ইঁদুরের কথা, স্কুলের ল্যাবে অজ্ঞাত সেই ব্যাঙের কথা, আমার ডুবতে ডুবতে একসময় বেঁচে ওঠা- একটানা সব হাজির হতে থাকে। সেই রাতে হোটেলে দিয়ার ডুকরে ডুকরে কাঁদার দৃশ্য ভাবতে গিয়ে মৃত গাদ্দাফির ছবি গ্রাফিকালি ভায়োলেন্ট মনে হয় না। আমি আরব বিপ্লবীদের সমর্থন করে ফেলি। এর কিছুক্ষণ পরেই ঠিকমতো হাগা পায়।


ফিরে: সন্দীপণ চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি’ উপন্যাসের মুখবন্ধে লিখেছেন- ‘এই ক্ষুদ্র উপন্যাসে বছরকে দিনে, মুহূর্তকে প্রহরে তথা প্রহরকে মাসে রূপান্তরির করার প্রয়াস করা হয়েছে। দিনাঙ্কগুলোও যে যার ঘরে নেই’। এই টুকুন গল্পে সেই ধরনের কোনো প্রয়াস নেই। তবে অজ্ঞাত ব্যাঙ গল্পটা এই গল্পের সাথে গল্পসূত্রে সম্পর্কিত।