টুকুনগল্প

অজ্ঞাত ব্যাঙ

সমুদ্র আমার কাছে একঘেঁয়ে মনে হয়। ঠেলে ঠেলে একই স্রোত বারবার পায়ের কাছে গড়ালে করুণা লাগে। কক্সবাজারের সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয়, সমুদ্রের পানিতে পা ছোঁয়ানোর মত বিরক্তিকর কাজগুলো বছরে একবার করতেই হয়। দিয়ার জন্য। অথচ সমুদ্র আমার ভাল লাগে না। আকাশ ভালো লাগে না। খোলা আকাশের নিচে চারপাশ থেকে চেপে আসা শুদ্ধ বাতাসে আমার হাসফাঁস হয়। কথাগুলো দিয়াকে কখনো বলি না। আরো অনেক কিছুই বলি না। অফিসে আমার নাম মিস্টার টুয়েন্টি পার্সেন্ট। আমার কিছু কিছু বান্ধবী আমাকে নিয়ে আমার ধরে থাকার ক্ষমতা নিয়ে প্রকাশ্যে এমনকি নিরালায় ভাবতে ভালবাসে। আমি ওকে বলি না। ওর মধ্যে জন্মে থাকা এক-আধটু ভুল-ভুল ভালবাসা আমি অক্লেশে হজম করি। ফিরে ফিরে আসা স্রোতের প্যারালেলে হেঁটে যাই। অদূরে দিয়াকে দেখি।

সমুদ্রের প্রতি ওর আত্মসমর্পণ দেখে কি যেন হয়। প্যারালেলে না হেঁটে পারপেন্ডিকুলারে পানিতে ঢুকে পড়ি। খানিক পরে বুঝতে পারি পাড় থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। কারো কারো চিৎকার কানে আসে। অনেক দূর থেকে। দিয়াও কি চিৎকার করছে? সন্দীপণের চরিত্রের মতো এই কাজ করব কখনো ভাবি নি। প্রায় দমবন্ধ হয়ে আসে। আমি তাও আশা করি সেই ইদুঁরের মতো, তপ্ত পিচে কষে রক্ত নিয়ে কিচকিচ আওয়াজ করা প্রায় মৃত ইঁদুরের মত আমি আশা করতে থাকি। কেউ এসে বাঁচাবে। স্কুলের জীববিজ্ঞান ক্লাসের কথা মনে পড়ে যায়। পানি গিলতে থাকি। শরীর, করোটি, আড়চোখে তাকানো বিকালের সূর্য, চোখেমুখেকানে ঢুকে পড়া অজস্র জলরাশি আমার ভাবনাকে আরো নিরবিচ্ছিন্ন করে। ক্লোরোফরম দেয়া একটা ব্যাঙ কাটছিলাম। অন্যদের মতো পিন দিয়ে চারপা বেঁধাতে মায়া লাগছিল। উল্টিয়ে কাচি দিয়ে মাঝ বরাবর কিছুদূর কাটার পর দেখি তড়াক করে লাফ দিয়ে ব্যাঙ উঠে পড়ল। পরে আরো দুই চারটা প্রয়োজনীয় লাফ দিয়ে উধাও। ব্যবচ্ছেদ করা অজ্ঞাত সেই ব্যাঙের কথা ভাবতে ভাবতে আমি ডুবে যেতে থাকি।