টুকুনগল্প

সোয়াদ

নাখালপাড়ার রাস্তার কুকুর ভোলা ঘুম থেকে উঠে বেশ কিছুদূর হেঁটে মোড়ের কসাইয়ের দোকানের একটু দূরে দাঁড়িয়ে মাংসের ঘ্রাণ নেয়। সকালবেলায় খেতে না পেলেও এই সুঘ্রাণ নেয়া কম সুখের কী। কসাই লোকটা খুব একটা সুবিধার না। এক দুই টুকরা হাড্ডি পাওয়া যায় অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকলে। তাও খুব সতর্ক থাকতে হয়। কসাই ব্যাটা হাড্ডি ছোঁড়ার সময় তার মুখ টার্গেট করে। রাস্তায় লোকজন ভোলার বিভৎস ঘেঁয়ো শরীর দেখলে ভড়কে দূরে সরে হাঁটে। সকালের নরম বাতাসে ঘা চেটে একটু নোনতা স্বাদ নেয়। তারপর ঝট করে মাথাটা সরিয়ে নেয়। কসাইয়ের গলার আওয়াজ শোনা যায়- হালায় অহন খুব সেয়ানা অইয়া গেছেগা। ভোলা হাড্ডি মুখে নিয়ে দ্রুত সরে পড়ে।

ড্রেনের পাশের চিপায় ঢুকতে গিয়ে বস্তির পিচ্চি সুলেমানের তাড়া খায়। চিপার মধ্যে দৌঁড়ে ঢুকে পেছন ফিরে দেখে সুলেমান অন্য কাজে মন দিয়েছে। আস্তে আস্তে আরো ভিতরে ঢুকে পায়ে আলতো চাপ দিয়ে বসে। ঘা-তে হালকা টান পড়ায় ব্যথায় কুঁই করে শব্দ করে। মুখের মধ্যে রাখা হাড্ডি গড়িয়ে গড়িয়ে ড্রেনের কাল পানিতে হারিয়ে যায়। ভোলা স্থির চোখে কাল চিকচিক পানির দিকে তাকিয়ে থাকে। ঘা চেটে জিহ্বার স্বাদ পাল্টায়। পরে শুয়ে পড়ে।

বস্তি থেকে অনর্গল শব্দ এসে ভোলাকে ঘুম পাড়ায়। বিকাল সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামে। পেটে ক্ষুধার টানে উঠে বসতে গিয়ে আবার ব্যথায় আওয়াজ করে। ড্রেনের পাশের ঝোপে সামান্য দূরে মানুষের ধস্তাধস্তি শুনতে পায় হঠাৎ। ভয় পেয়ে অন্যদিকে যায়। একজন মানুষের মারাত্মক গোঙ্গানি দীর্ঘ নাদ সেরে ঝিম মারে। লোকজন সরে পড়ে। আরো খানিক বাদে ভোলা এগোয়। রক্তের ধারা গড়িয়ে এসে পায়ে লাগে। জিহ্বা রক্তের লালে আবারো স্বাদ বদলায়।