টুকুনগল্প

বরাহ

ইহারা বরাহ। তবে মনুষ্য ভেকধারী। মনুষ্য পদবাচ্য হইলেও গুণ বিচারে মনুষ্যত্বের ছিঁটেফোঁটা ইহাদের মধ্যে খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর। বলা যায় প্রাণিজগতের প্রজাতি বিচারে ইহারা হোমো সেপিয়ান্স্ মাত্র। বাহ্যিক রূপে দেখিতে ইহারা বরাহ তুল্য। চরিত্র বিচার খানিক বিলম্বে করিব। একখানা গল্পের কথা মনে পড়িয়া গেল। এক বৃদ্ধমহিলা তাঁহার রামছাগল খুঁজিয়া পাইতেছিল না। খুঁজিতে খুঁজিতে এক হুজুরের ওয়াজ মাহফিলের কাছাকাছি আসিয়া পৌঁছাইল। হারাইয়া যাওয়া ছাগলের সন্ধান মিলিল কিন্তু জনতার ভিড়ে আগাইতে না পারিয়া খানিক দূরে গিয়া বসিল। হুজুর ওয়াজের নেশায় মাতোয়ারা ছিলেন। কিছুক্ষণ বাদে লক্ষ্য করিলেন এক বৃদ্ধা মহিলা তাঁহার ওয়াজ শুনিয়া আকুল হইয়া কাঁদিতেছে। দেখিয়া হুজুরের মনে ব্যথার উদ্রেক হইল। বৃদ্ধাকে পুছ করিলেন- মা জননী, আপনি আমার কোন কথায় এতো উদ্বেলিত হইয়াছেন? বৃদ্ধা কহিলেন- হায়রে তোমারে দেখিয়া ভাবিয়াছিলাম আমার হারানো ছাগল। ছাগলটা আমার বাঙলা কহিত না। তুমি আমার হারানো ছাগল নহ ইহা বুঝিয়া কাঁদিতেছি। কিঞ্চিৎ পরিষ্কার হইল কি? এই বরাহ গোত্রের জ্যেষ্ঠদের খোমায় দাঁড়ি ঝুলিবে ইহা প্রায় নিশ্চিত। কচি বরাহসমূহ ক্লিন সেভড্ হইলে চিনিতে পারা দুষ্কর। চেহারা লুকাইতে পারিলেও চরিত্র ঢাকিয়া রাখা তো সম্ভব নহে। চিনিয়া লইতে তাই বেশিক্ষণ সময়ক্ষেপণের প্রয়োজন পড়িবে না। ইহাদের বাহ্যিক রূপের হরেক বর্ণনা দেয়া সম্ভবপর। সেই প্রচেষ্টা থাউক। গুণ বিচারে অগ্রসর হই। ইহাদের চরিত্রে চিরুণি তল্লাশ সমাপন শেষেও কিঞ্চিৎ উত্তম কিছুর সন্ধানলাভ ঘটে না। জাতীয় সংকট অথবা যুদ্ধকালীন সময়ে ইহারা সুবিধাবাদী এবং বর্ণচোরা হইয়া পড়ে। নির্যাতন লুটপাট ধর্ষণের মাধ্যমে নিজেদের নোংরা খাসলত চরিতার্থের সর্বৈব সুযোগ ইহারা গ্রহণ করে। ইহাদের কথাবার্তার মধ্যে ধর্মের নসিহত আসিয়া পড়ে বারংবার। নবী এই কহিয়াছেন ঐ কহিয়াছেন বলিয়া আগাগোড়া ধূম্রজালে ফেলিয়া দেওয়া ইহাদের কারিশমা। পাপ ঢাকিবার জন্যে ইহাদের ক্ষণে ক্ষণে ধর্মের শরণাপন্ন হইতে হয়। ইহারা ধর্ষক মনোবৃত্তির। রাষ্ট্র ধর্ষণে ইহাদের আনন্দ ঘটে সর্বাধিক। কলার চোকলার মতো ইহারা দেশ ও নারীকে ঢাকিয়া রাখিতে চেষ্টার কসুর করে না। অতীতকে স্মৃতি হইতে নিক্ষেপ করিবার আহ্বান জানাইয়া জাতীয় ঐক্য বজায় রাখিতে ইহারা বড়ই উদগ্রীব। ইহাদের মুখ হইতে যাহা কিছু নিঃসৃত হয় তাহা সত্যের একেবারেই বিপরীত। ইহারা জাঁহেল। সুযোগসন্ধানী। হত্যাকারি। বেহায়া। মোনাফেক বলিতে কোন যথার্থ উদাহরণ চাহিলে নিজেদের নাম সর্বাগ্রে আসিয়া পড়িবে বিধায় ইহারা কথায় কথায় অন্যদিগকে মোনাফেক বলিয়া আখ্যায়িত করিয়া থাকে। জনতার থুথু উত্তমরূপে হজম করিতে ইহারা পারঙ্গম। ইহাদের দারা পুত্র অন্ধের হাতি দর্শনের এক ভ্রান্ত ধারমার মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করিতে থাকে।

ইহাদের চরিত্রের বর্ণনা করিতে আর মন চাহিতেছে না। বরঞ্চ দু চারখানা বরাহ কতল করিতে মন চাহিতেছে।