একটা টব। তাতে মাটি। সেখানে ছোট্ট একটা নয়ন তারা ফুলের গাছ। একটু রোদ লেগে ফুলে বেশ দম্ভ ভাব। আশেপাশে আরো কিছু ফুলগাছের টব। টানা বারান্দা। তাতে লোহার গ্রিল। তার বাইরে আকাশ। খানিক আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। রোদ উঠছে মেঘের শরীর সরিয়ে। নয়নতারা গাছে ছয়টা ফুলের কনিষ্ঠতম ঝরে গেল। অকারণে।
বারান্দার পাশে ঘর। বিছানা। তাতে শুয়ে আমি। সব দেখি। আমার কল্পনায়। ভেবে নেই। এটা। ওটা। নয়নতারার কনিষ্ঠতমের ঝরে পড়ার মতন। আকাশে রোদ উকি দিচ্ছে। বুঝতে পারছি। ঘড়ির কাঁটা। তার ঘুরে চলা। দেখছি। পর্দা সরে গেলে বারান্দায় রাখা এক দুটা গাছ। তাও দেখছি। দেয়াল। দেয়ালের রঙ। কোনায় মাকড়সার জাল। টাঙানো অনেক পুরানো মানচিত্র। টেবিল। তার ওপর রাজ্যের ধুলাবালির নিচে চাপা পড়ে থাকার জিনিসপত্র। দেখছি। ফুলের গায়ে রোদ লেগে ফুটে ওঠা দম্ভ দেখি না অনেক দিন। আমি শুয়ে থাকি। দিন রাত। ক্লান্ত হলে শূন্যে ভেসে পড়ি। ভুলে যাই আমার রোগ। বিভৎস সেই কোয়াড্রিপ্লেজিয়া। কেবল মুখ ছাড়া আমার আর কোথাও কোন সাড় নেই। উড়ে উড়ে আমি মৌতাতে মাতি। মা রুমে এসে ঢোকে।
মার দিকে আমি আর তাকাই না। মার চোখ দেখলে আমার সব মনে পড়ে যায়। আমার অকথ্য কিছু ব্যথা ফিরে আসে। মা-ই সব করে। কিছুদিন নার্স রাখা হয়েছিল। নার্সরা সাফ সুফা করতে করতে গাল মন্দ করত। মা একদিন শুনে ফেলেছে। সেই থেকে মা-ই সব করেন। করুক। মাকে দেখলে ভাল লাগে না। বাবাকে না। বড়দাকে একদমই না। চোখে ইদানীং কিছু দেখতে ইচ্ছে করে না। এই রোগের হাজার জারিজুরি। আমাকে অন্ধ করে দেয় না কেন?
বাবাকে সেদিন বললাম। আর ভাল লাগে না। যেতে দাও। বাবা কাঁদে। বড়দাকে খুব করে বললাম। বড়দা বলে- দূর পাগলি। এক রাতে স্বপ্ন দেখলাম মা আমার মুখে বালিশ চেপে ধরেছে। ট্রমার বিপরীতে যে উইশ ফুলফিলমেন্ট। তার কি অপার শান্তি। মাকে কিছু বলি না। বলতে ইচ্ছা হয় না।
নয়নতারা ফুল ঝরে পড়ে। কনিষ্ঠতম। আমি ঝরে যেতে চাই।