অতো চিন্তাভাবনা করে ব্যবসাটা শুরু করিনি। প্রথমে ছোটোই ছিল। গাড়ির পার্টসের ব্যবসা। তারপর নানা কিছু শিখে ফেলি। লোক ঠকানো একদমই নিতান্ত প্রত্যন্ত একটা সাদামাঠা ব্যাপার। তাই ঠকানো শুরু করি। আচ্ছা, কেবল যে আমি একাই ঠকাই সেটা না। আপনারাও ঠকান। এমনকি আপনিও। স্যরি। রাগ করবেন না। নিজের কথাই বলি বরং। আমার খুব শীঘ্রি আরেকটা পার্টসের দোকান হয়। তারপরে আরো একটা। পরে গাড়ির ডিলারশীপ। গাড়ি বলতে মোটর-সাইকেল। যা গড়িয়ে চলে, তাকেই আমি গাড়ি বলি। চাইনিজ এক অখ্যাত মোটর সাইকেল কোম্পানীর সাথে চুক্তি ফুক্তি করে ফেলি। বরিশাল আর রংপুরে দুইটা শো-রুম খুলি। এর বছর দুয়েক পরে ঢাকায় একটা শো-রুম। চার চাকা এইবার। কার। এক বছরের মাথায় একটা বায়িং হাউজ। এরপর উত্তরায় একটা গারমেন্ট ফ্যাক্টরি। তারপরে আরো নানা ব্যবসা। বলে রাখা ভালো, একটা এনজিও-ও খুলি। এখন আমি ১% দলের লোক।
৯৯% আমজনতার বিপরীতে আমি, আমরা মাত্র ১%। ইদানিং নানারকম কলরব শুনতে পাই। অকুপাই ওয়ালস্ট্রীট। অকুপাই অকল্যান্ড। অকুপাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এই অকুপাই আন্দোলনের সাথে বিপ্লব শব্দটা শুনলে আমার ফ্যা ফ্যা করে হাসি আসে। বিপ্লব করতে গেলে একটা সহজবোধ্য টার্গেট লাগে। এই যেমন একাত্তরের সময় আমাদের ছিল ছয় দফা। অকুপাই আন্দোলনে এইসব নাই দেখে এগুলোকে উৎসব-জমায়েতের বেশি কিছু মনে হয় না। আপনাদের কানে কানে বলি- ৯৯% এর সাথে আমাদের (১%) মোটাদাগে যে পার্থক্য আছে তা কিন্তু না। আমরা ১% একটু উদ্যোগী, অর্থ বা লোভের ব্যাপারে একটু বেশি মনোযোগী আর কিছুটা ঝুঁকি নিই। ব্যস্। এইটুকু বাদ দিলে আমি আপনি সমান। কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ মাত্সর্যে আমাদের মধ্যে বিভেদ বেশি না। সব মিলিয়ে ৯৯% এ ঢুকে পড়ার জন্য দায় কিন্তু ভাই আপনার, আপনাদের।
সাত বিলিয়ন মানুষের মধ্যে আমরা সত্তর মিলিয়ন। নিজেকে তাই এলিট ভাবতে মন্দ লাগে না। হেজামৌনির ওচা ঢেকুরগুলো মাঝে মধ্যেই অপ্রকাশ্যে তুলি না। গারমেন্টে একটা দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক মারা গেছে মাস সাতেক আগে। ক্ষতিপূরণ দেয়ার ফাইলটা টেবিলের এক কোনায় পড়ে আছে অনেকদিন। এক লক্ষ টাকা থেকে একটা শূন্য কমিয়ে সাইন করে রিসেপশনিস্টকে ডাক দেই।