জামি কাকলির মোড়ে বাস থেকে নেমে পড়ে। ফুট ওভারব্রীজের ওপর দিয়ে হেঁটে ওপাড়ে বনানী মার্কেটের সামনে এসে সামান্য থামতে হয়। আবুল উলাইয়া থেকে ফজলুল রহমান বাবুর গলা শোনা যাচ্ছে। নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে ধর বন্ধু আমার কেহ নাই। কেহ নাই কেহ নাই এই শব্দপুঞ্জের অর্থ এত মানুষের ভিতরে মাথায় খেলে না। মার্কেটের নীচতলার খাবারের দোকানের সামনে টিকলির দাঁড়ানোর কথা। নেই। মানে ক্লাস এখনো শেষ হয় নি। রিং করে লাভ হবে না। মিউট থাকবে। অনর্থক রাস্তায় হেঁটে সময় নষ্ট করা কঠিন। হেঁটে এগোলে একটা ফুলের দোকান সামনে পড়ে। আরো হাঁটলে দোকানটা পেছনে পড়ে। দুই মিনিট হাঁটার পর এনএসইউ’র মেয়েদের বগলকাটা জামা থেকে বেরিয়ে আসা ফরসা ফরসা হাত চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দেয়। ধাঁধাঁ দীর্ঘস্থায়ী করতে জামি একই রাস্তা ফিরে ফিরে হাঁটে। এক সময় অত ফরসা হাতে বিরক্ত ধরে। বাইরে ভীষণ গরম। কোথাও ঢুকে একটা কোক মেরে দিতে গিয়েও আনমনে হাঁটতেই থাকে সামনে। এক সময় নিজেকে দেখে যাত্রার সামনে। আনুশেহ’র দোকান। টিকলি এই দোকান ভীষণ ভীষণ পছন্দ করে। হয়তো আনুশেহ’কে পছন্দ করে বলে। যাত্রার ব্যাগ কিনতে কিনতে একদম ব্যাগবতী হয়ে গেছে।
জামি একা একা কখনো এই দোকানে যায় নি। একটু ইতস্তত করে, পরে ঢুকে পড়ে যাত্রায়। রিকশা পেইন্ট দিয়ে দোকানের ইন্টেরিয়র। পুরানো পত্রিকা রিসাইক্লিং করে ঠোঙা বানানোর ব্যাপারটা ছাড়া যাত্রার অন্য কিছু জামির খুব একটা ভাল লাগে না। দোকানের ভেতরে কেউ নেই। ক্যাশিয়ার বা অন্য কাউকেও দেখা যাচ্ছে না। জিনিসের পর জিনিস সাজানো। চুড়ি, মালা, ব্রেসলেট, মানিব্যাগ, অ্যাশ-ট্রে, চাবির রিং, বাঁশের ঝুড়ি যার যার চেহারায় বসে আছে। নানা জাতের মোম একসাথে মৌন মিটিংয়ে কি যেন করছে। টেবিলক্লথ, ন্যাপকিন, বেতের তৈরি ডাইনিং ম্যাট, মাটির তৈজসপত্র দাঁড়িয়ে আছে, বসে আছে, শুয়ে আছে। ঢাকাইয়া সিনেমার পেইন্টে করা হারিকেন। সেখানে জসিমের কোন ছবির পোস্টার। কাঠের তৈরি, মাটির তৈরি বাটি, কাপের মধ্যে চা নেই, খাবার নেই। খালি। আরো ভেতরে গেলে ব্যাগের সেকশন। আর সেখানে আনুশেহ দাঁড়িয়ে। জামি একটু ভড়কে যায়।
আপনাকে কোন হেল্প করতে পারি?
আনুশেহ’র প্রশ্নে জামি বেশ প্যাঁচে পড়ে।
না এমনি … হ্যাঁ, আমার … আমার বোনের জন্য একটা …
একটা কি?
না ইয়ে … মানে ব্যাগ
স্কুলব্যাগ?
না, ওই যে ব্যাগ। কাঁধে নেয়।
স্কুলব্যাগ ও তো কাঁধে নেয়? হ্যাণ্ডব্যাগের কথা বলছেন, না?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাণ্ডব্যাগ …
জামি, এটা দেখতে পারেন। আপনার বোনের পছন্দ হবে।
আপনি আমাকে …
এইটার দাম পাঁচশো টাকা। কাউন্টারে নিয়া যান।
টাকার কথায় আর গলার উচ্চ স্বরে জামি ভাল করে তাকিয়ে দেখে একজন সেলসগার্ল তাকে লাল বদখত একটা ব্যাগ দিচ্ছে। এদিক ওদিক ঘুরেও আর আনুশেহকে আর দেখা যায় না। কাউন্টারে গিয়ে ব্যাগটা দিয়ে অপেক্ষা করে। টাকা দেবার সময় জামি ক্যাশিয়ার লোকটাকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা- আনুশেহ ম্যাডাম কি একটু আগে এখানে এসেছিলেন?
না, স্যার। ম্যাডাম তো খুব ব্যস্ত থাকেন। বছরখানেক হইয়া গেল উনি এই ব্রাঞ্চে আসেন না।