দুপুরবেলা মা আমাকে সাথে নিয়ে ঘুমাতে যায়। মা শুয়ে পড়তে না পড়তেই ঘুমিয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে নাক ডাকা শুরু করে। আমার ঘুম আসে না। বাড়ির ছাদ, গণেশ ঠাকুরের ইয়া মোটা পেট, তাঁর বাহন ছোট্ট ইঁদুর, ঘুরতে থাকা ফ্যান, মশারির স্ট্যান্ড, মা’র নাক- নানা দিকে আমার চোখ ঘুরতে থাকে। ছাদের কোনায় মাকড়শাটা এই সময় বেশ চুপ থাকে। মার মতো মনে হয় দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস। একটা টিকটিকি গণেশ ঠাকুরের ছবির ফ্রেমের পেছন থেকে বেরিয়ে পড়তেই আমার সাথে চোখাচোখি। একদম নড়াচড়া না করে চুপ করে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ দিয়ে আশেপাশে কোনো কাগজ খুঁজতে থাকি। বালিশের নিচে খবরের পত্রিকা পেয়ে সেখান থেকে একটা কোনা ছিঁড়ে আস্তে আস্তে দলা করি। টিকটিকির দিকে ছুঁড়তেই টার্গেট মিস হয়। ভয় পেয়ে ব্যাটা দেয়ালে লাগানো ম্যারাডোনার নাকের ওপর গিয়ে বসে। আমি তাড়াতাড়ি আরেকটা কাগজের দলা পাকাতে না পাকাতেই দৌড়ে ঢুকে পড়ে রাম ঠাকুরের ছবির ফ্রেমের পেছনে। কাগজের দলা আর টার্গেট খুঁজে না পেয়ে উড়ে যায় মাকড়শার দিকে। জালে গিয়ে আটকায়। বোধহয় মাকড়শার ঘুম ভাঙে। মা ঠিক তখনি পাশ ফিরে। আমি চোখ বন্ধ করি। কিছুক্ষণ নাক ডাকার বিরতি। আবার নাক ডাকতে শুরু করলেই আমি নিঃশব্দে বিছানা থেকে উঠে পড়ি।
তারপর বারান্দার দরজা খুলে বের হই। বারান্দার চারদিকে গ্রিল। গ্রিল পেরিয়ে আমাদের পাড়ার মাঠ। বেশ ছোট। তবে খেলোয়াড়ের কমতি নেই। মা পাড়ার ছেলেদের সাথে আমাকে মিশতে দেয় না। ওদের সাথে খেলা সত্যি সত্যি কখনো হয়ে ওঠে নি। তবে গ্রিল ডিঙিয়ে প্রায় প্রতি দুপুরে আমি মাঠে নামি, দৌড়াই, দাঁড়িয়ে হাঁফাই, প্রয়োজন পড়লে ঈশ্বরের হাত দিয়ে গোল পর্যন্ত করি।