টুকুনগল্প

১,৩৬৭,৪৪০ টি মৃত চড়ুই

১৯৫৮ সালে চীনের চেয়ারম্যান মাও জেদং কৃষকদের কথা ভেবে চারটা ক্ষতিকারক প্রাণীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। চালু করা হয় চার বছরব্যাপী ফোর পেস্ট ক্যাম্পেইন। ইঁদুর, মাছি, মশা আর চড়ুই চীন থেকে তাড়াতে শুরু হয় ব্যাপক প্রচারণা। চড়ুই খারাপ কারণ তারা বীজ খায়। ঢোল, বাসনপত্র বাজিয়ে বাজিয়ে চীনের লোকজন চড়ুইদের ওড়াতে ওড়াতে ক্লান্ত করে। বাচ্চারা বুড়োরা তখন কানটা গুলতি দিয়ে থরে থরে চড়ুই মারে। আঞ্চলিক সুমারি অফিসগুলো মরা মশা মাছি ওজন করে আর গুনতে থাকে ইঁদুর আর চড়ুইদের মৃতদেহ। সাংহাই ১৯৬২ সালে তাদের অঞ্চলের সুমারি ফলাফল জানায়। ৪৮,৬৯৫.৪৯ কেজি মরা মাছি, ৯৩০,৪৮৬ টি মৃত ইঁদুর, ১,২১৩.০৫ কেজি মরে যাওয়া মশা, ১,৩৬৭,৪৪০ টি মৃত চড়ুই। ১৯৬০ সালে চীনের ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স জানায়- চড়ুই বীজ যা খায় তার চেয়ে বেশি খায় পঙ্গপাল। মাও এদের কথা কানে তোলেন না। প্রচারণা অব্যাহত রাখতে বলেন। চড়ুই না থাকায় পঙ্গপাল বাড়তে থাকে। শুরু হয় দুর্ভিক্ষ। মারা যায়, সরকারি হিসাবমতে, তিন কোটি আমজনতা। বেসরকারি হিসেবে, সাড়ে চার কোটি মানুষ। এতো এতো মৃত্যুতে চেয়ারম্যান গা না করে নিজের আয়ু বাড়ানোর বটিকা হিসেবে কুমারী গমনে ব্যস্ত হন।

চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান

চীনের পথ আমাদের পথ। চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান।– নকশাল আন্দোলনের নেতা চারু মজুমদারের কথাগুলো এপাড় বাংলাতেও শোনা যেত। কৃষি বিপ্লব, শ্রেণীশত্রু খতম এসব কথা শুনতে শুনতেই একটা আস্ত যুদ্ধ সামনাসামনি এসে পড়ে মাওবাদী, পিকিংপন্থী কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যদের সামনে। চীন আমেরিকার দোসর হয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিলে সমস্যা আরো গুরুতর হয়। শ্রেণীশত্রু নির্বাচনে তাদের চোখের চশমা আরো ঘোলাটে হয়ে পড়ে। এদের কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রেণীশত্রু ভেবে নেয়। কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় থাকে। তবে বিপ্লবী কিছু সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে নেয়- চীনের চেয়ারম্যান কোনো কারণেই আমাদের চেয়ারম্যান হতে পারে না। ফলে দেরি না করে রাজাকার আর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ে। এদের কয়েকজন শহীদ ও হন।

চেয়ার বিষয়ক শূন্যতা

অক্টোবর ৮, ২০১০:

চীনের মানবাধিকার কর্মী কারাবন্দি লিউ জিয়াবো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।

অক্টোবর ১১, ২০১০:

চীনে জিয়াবোর স্ত্রীকে গৃহবন্দি করে রাখে চীন সরকার।

অক্টোবর ২৫, ২০১০:

প্রাক্তন নোবেল বিজয়ীরা লিউ জিয়াবোর মুক্তি দাবী করেন।

ডিসেম্বর ৪, ২০১০:

জিয়াবোর মুক্তির দাবী জানান আর্চবিশপ টুটু আর সাবেক চেক প্রেসিডেন্ট হাভেল।

ডিসেম্বর ৯, ২০১০:

পুরস্কার বিতরণী ঘনিয়ে আসায় চীন বেশি বেশি রাগ দেখাতে থাকে।

ডিসেম্বর ১০, ২০১০:

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিতরণীতে আমরা সবাই চেয়ার বিষয়ক শূন্যতা দেখি।