টুকুনগল্প

দা লাভার

নিজের বাসাকে আর আগের মতো মনে হয় না নীতুর। ছোট দুই রুমের এই বাসার সাথে রান্নাঘর, সাথে বাথরুম। বাসার চারদিকে টানা চিকন বারান্দা। কলে পানি আসে সকাল সাতটায় আর বিকাল পাঁচটায়। মা কলে নল লাগিয়ে দুটো বড় ড্রাম ভর্তি করে রাখে। এই তোলা পানি দিয়ে রান্না গোসল এসব সারা হয়। বাবা সকালে কলে পানি থাকতে থাকতে গোসল সেরে ফেলে। কিছুদিন ধরে পাড়ার কতিপয় খচ্চর বিড়ালের সাথে নীতুদের একটা অঘোষিত শত্রুতা তৈরি হয়েছে। আজ সকালেও ঘরের সামনের দরজায় পায়খানা করে গেছে। বাবা অভ্যাসবশে সেগুলো সাফ করতে করতে বিড়ালের মা-বোনের সাথে মৌখিক রমণ করে ফেলে- উঁচু গলায়। অন্যদিনের চেয়ে একটু কি বেশি আওয়াজে? অন্যসময়ে এসব শুনলে নীতুর হাসি পেত। আজ প্রতিদিনকার একই বাসা একই বাবা-মা একই গালিগালাজ অন্যান্য দিনের মতো মনে হয় না। মা অল্পতেই কাঁদে। কাল দুপুর থেকে মা এক নাগাড়ে কেঁদে চলছে। কাল রান্না বান্না কিছু হয়নি। রাতে কেউ খায় নি। আজ সকালে মা কান্নার সাথে সাথে ঘর ঝাড় দেয়া, রান্না করা, পানি তোলা, বাবার জামা ইস্ত্রি করার কাজ করতে থাকে। বাবাকে চা করে দেয়। বাবা চা খেয়ে ঘর থেকে বেরোনোর প্রস্তুতি নেয়। নীতু দেয়ালের দিকে মুখ রেখে শুয়ে থেকে কল্পনা করতে থাকে বাসা থেকে বেরোনোর সময় তার দিকে তাকিয়ে থাকা বাবার বিবর্ণ মুখ।

আমাদের ছোট নদী

নদীর জল গ্রামের লোকেরা সেরদরে বিক্রি করে দিলে নদী তার অনাবশ্যক শূন্য শরীরে দিন কাটাতে থাকে আর কিছুদিন পরে সেই শরীরের মেদ বাড়ে কিছু কিছু বাড়ি ঘর দোকান সাথে পাঁচ তলা শপিং কমপ্লেক্সের কারণে আর ঐ কমপ্লেক্সের গায়ে একটা নিয়ন বাতি ক্রমাগত জ্বলে জ্বলে ঘোষনা করে প্রাক্তন নদীটির নাম।

অরণ্যের দিন

আমার ডাকনাম টুকটুক স্কুলে কেউ জানতো না। বেশ কিছুদিন আগে আনিকা আমাদের বাসায় ওর মাকে সাথে নিয়ে বেড়াতে আসে। মা আমাকে ওদের সামনে টুকটুক নামে ডেকে ফেলে। শয়তানটা পরদিন স্কুলে এসে সবাইকে জানিয়ে দেয় আমার নাম টুকটুক। নামটা সেদিনই পালটে যায়। ওরা আমাকে ডাকতে থাকে টকটক। মাথায় দুইবার টোকা দিয়ে বলে- এই যে টকটক, কেমন আছিস? আনিকার ওপর রাগ হয়। আরো রাগ বেশি হয় রেণুর ওপর। রেণু আমার অনেক বন্ধু। ভীষণ বন্ধু। একটা কি ঝগড়ায় রেণুর সাথে কথা বন্ধ বেশ কিছুদিন ধরে। রেণু কেন ওদের কিছু বলে না? আনিকা একটু মোটা মতো- আমি প্রতিশোধ নিতে ওকে মোটিকা ডাকতে শুরু করি। অন্যারা ও ডাকে। তবে আনিকা স্বনামে ফিরে আসে কিছুদিনের মধ্যেই। আর আমি টকটক থেকে যাই। বাড়িতে মা আমাকে ডাকে টুকটুক। অন্যরা ডাকে টুকু। বাবা ডাকে অরণ্য।