গোলযোগটা আদতে ছোট। হঠাৎ করে পৃথিবীর বাসিন্দা মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা ছোট্ট সমস্যা দেখা দেয়। অবশ্য এমন আহামরি কিছু নয়। মঙ্গলবার সকাল। অন্যদিনের মতোই যে যার মতো স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, পেন্টহাউজ, ক্লাব, গার্মেন্টস, বাজার, ক্যাসিনোর দিকে যাওয়া শুরু করে। কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হয় কেউ কেউ। কতিপয় লোকজন অবশ্য বেরোয় না। ঘরেই থাকে। শুয়ে বা বসে।
সকালে যা হয়, যে যার মতো কাজ বা অকাজ আরম্ভ করতে চায়। যখন কাউকে নাম ধরে ডাকার ব্যাপার আসে তখন সমস্যাটা ঠিক করে বোঝা যায়। ডাকতে গিয়ে অন্যজনের অতি পরিচিত নামটা মাথায় আসে না। সমস্যা আরো প্রকট হয় যখন নিজের নামটা মাথা থেকে বেমালুম গায়েব হয়। এদের কেউ কেউ ফোন ধরে স্বভাবসিদ্ধ গলায় বলে ফেলে মি. … স্পিকিং। অপরপ্রান্ত থেকে তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন আসে, কে বলছেন? ফোন রেখে দেয়া তখন উপায় থাকে না। নিজের নামটা মাথায় না আসায় পার্স থেকে যাবতীয় এক দঙ্গল কার্ড টেবিলের ওপর ফেলা হলে প্রতিটা কার্ডে নিজের নামের জায়গায় একটা অমানবিক শূন্যতা স্পষ্ট হয়। পৃথিবী গ্রহে ব্যক্তির নাম ভিত্তিক যাবতীয় ডাটা বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে- এই কথা আস্তে আস্তে বুর্জোয়াসকল সকাল সকাল আবিষ্কার করে ফেলে। ফলে হৈচৈ শুরু হয়। টেলিভিশন চ্যানেল এসব হৈচৈ কে জোরালো হৈচৈ করে দেয়। বিকেলের মধ্যে টিভির পর্দায় আমেরিকার চুয়াল্লিশতম প্রেসিডেন্ট জনাব … হাজির হন। মানব জাতির এই সাম্প্রতিক ভেজাল নিয়ে নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা শেষ করেন একটা স্মার্ট কথা বলে- নাম না থাকায় আমার খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। মি. ব্ল্যাক প্রেসিডেন্ট বললেই সবাই চিনে ফেলছে। এর মধ্যে কমিউনিকেশন এক্সপার্টরা টিভি পর্দায় হাজির হতে থাকে। বহিরঙ্গের বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বুর্জোয়ারাও হৈচৈ অব্যাহত রাখে। এদিকে রিকশাওয়ালা, ইটভাটার লালাভ শ্রমিক, দেহোপজীবিনী, অটোচালক, ঠেলাওয়ালা, পানবিক্রেতা, বাজারের তরকারিওয়ালা সহ একশ্রেণীর প্রলেতারিয়েত বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা কী রাতে ও এই সমস্যা মালুম করে না। পরবর্তী দিন, পরবর্তী মাস, পরবর্তী বছরেও। আগের মতোই সবাই তাদের একই নামেই ডেকে চলে। ঐ।
সাম্প্রতিক পাঠ: জাপানি লেখক কোবো এবি-র গল্প ‘দা ক্রাইম অফ এস. কার্মা’; লন্ডন রিভিয়্যু অব বুকসের এগারো ফেব্রুয়ারি ২০১০ সংখ্যায় মিখাইল লেরমেন্তভের ‘আ হিরো অফ আওয়ার টাইমস্’ নিয়ে লেখা জেমস্ উডসের সমালোচনা।