ভালোবাসা শহরে প্রবেশ করলে গায়ক বোনো একটা গান বাঁধে। পরে সেটা নিয়া দেখায় লিজেন্ড বিবি কিং-কে। ইউটু আর বিবিকিং-য়ের সেই গান দেখে পুরান ঢাকায় ইংলিশ রোডের বাসিন্দা ছত্রিশ বছর বয়সের আবু শেখ আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়। গানটা সারাক্ষণ শুনতে শুনতে তার এক সময় মনে হয় ভালোবাসা পুরান ঢাকায় ও ঢুকে পড়েছে। এই গলি ওই গলি যাবতীয় তস্য গলি ডিঙিয়ে ভালোবাসার প্রবেশ ঘটেছে ইংলিশ রোডে। আবু শেখ বাসার ছাদে উঠে চিল্লাতে থাকে। আবে হালায় চুদমারানীর পোলায় তুই আইছস। এদ্দিন বাদে হালায় তর … এই সব চিল্লানিতে ছাদের সিঁড়িঘরের ছায়ায় শুয়ে থাকা বিড়াল ডিপজল একটু চোখ খুলে তাকায়, পরে আবার বন্ধ করে।
আমরা সবাই অন্ধ বধির সেই ট্রেনের আরোহী। আমরা নানা বিষয়ে গল্প করি, হাসি। আমাদের মাঝে থেকে যাওয়া অন্ধকার ঘষে ঘষে আরো কালো করি। ট্রেনের বগিগুলোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হই। অন্ধ বধির ট্রেনের গতিতে, তার ক্রমাগত চলতে থাকায় আমাদের মুগ্ধতা বাড়ে। জানালাগুলো কালো রঙ করে দিয়ে আলোর নিশানার নিকুচি করি। পরে আবার গল্পে মাতোয়ারা হই। পরে একদিন আমাদের একজন ট্রেনের চেইন টানে। অন্ধ বধির অতিপ্রিয় ট্রেন থামলে সে নেমে পড়ে। আলোর অনভ্যাসে আমরা কিছুক্ষণ কিছুই দেখতে পাই না। ট্রেন আবার চলা শুরু করলে আমরা লোকটাকে গালমন্দ করতে থাকি। পরে একসময় ভুলে যাই।
আমরা দুজনে দুপুরে উদ্দাম থাকি। রায়েরবাজার তখন প্রতিদিনকার মতো ঝিমাতে থাকে। সেই ঝিমানির ভর করে কুমার হিমাংশুকে। হাতের অস্থিরতায় মাটির কলসির গলা সরু হয়ে গেলে আবার সটান হতে গিয়ে ক্ষতি যা হবার হয়ে যায়। আমরা দুজনে জেগে থেকে নিজেদের জানি। কুঠুরি চিনি। তিনতলা বাড়ির সেই চিলেকোঠার বাইরের খোলা জায়গায় তারে টানানো হরেক রকমের কাপড়। লন্ড্রির এক দোকান এই জায়গা ভাড়া নিয়ে কাপড় শুকায়। রায়েরবাজার ঝিমাতে থাকে, আমরা আমাদের মধ্যকার উদ্দামতা অব্যাহত রাখি এবং এই দীর্ঘ সময়ে একটা নিরীহ কাক তারে টানানো লাল কোনো শাড়ির ওপর বসে থাকে, পরে পায়খানা করে উড়াল দেয়।
জামান ফুল চেনে না। জামানের মা সহজ সত্যটা আবার জানতে পারে অনেক পরে। জামানের ছেলের বয়স তখন পাঁচ। একটা রজনীগন্ধা ফুলকে টগর বলায় নাতি ঋতুর দিকে অবাক চোখে তাকালে পুত্রবধূ জানায়, আম্মা আপনার ছেলেওতো কোন ফুল চেনে না। ছেলে বাপের স্বভাব পেয়েছে। তিনি কিছুটা অবাক হন। জামানের ফুল না চেনার ঘটনায় কিছু কথা মনে পড়ে যায়। ছেলের বয়ঃসন্ধিকালের ঘটনাটা জামানের মা বেমালুম ভুলে গেলেও বৌমার এই কথায় কাজের মেয়ে ফুলির কথা মাথায় আসে। খালাম্মা ভাইজান যেন কী। কুনৌ ফুল চ্যানে না। মেয়েটাকে বাধ্য হয়ে তাড়াতে হয়েছিল।