টুকুনগল্প

ফাঁস

আমার আর কিছুতে ঢেউ লাগে না। মাঝে মাঝে অসম্ভব অসহ্য সাদা আলোর ধাক্কায় অন্ধ হয়ে যাই। ঘামতে থাকি।শ্বাস পর্যন্ত নিতে পারি না। সময় ভারি হতে হতে শুন্যে ভেসে পড়ে। ছোটন, তুই চলে গেলি আজ তিন বছর হয়ে গেল। কত বয়স ছিল তোর? বিশ। না বিশ ও তো পুরা করতে পারিস নি। তার আগেই …

ছোটন। আমার ছোট্ট ছোটন। তোর বাবার সাথে তোর কি সেখানেও ঝগড়া লাগে? বাপে ছেলে হাঙ্গামা লাগিয়ে রাখতি সারাদিন। তুই কি বাপের ভয়ে এভাবে ফাঁস দিয়েছিলি? বাবাকে কি বলবি ? বাবার সামনে কিভাবে দাঁড়াবি ? তুই মরে যাবার তিনদিন পর ও চলে গেল। তোর কাছে। তুই সবাইকে বলতিস- মা খুব ভালবাসে, বাবা একদম না। মা তো রয়ে গেছে রে তোর।

কেন এমন করলি? তুই সবসময় অনেক পড়তি। পড়ার বইয়ের চেয়ে বাইরের বই বেশি পড়ায় মন ছিল। আমি কিছু বলতাম না। তোর বাবা রাগ করত। বাবা ঘরের বাইরে গেলে আর দেখে কে? পড়ার বই ছুঁড়ে গল্পের বই নিয়ে বসতি। রেজাল্ট ভাল করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে গেলি। সেখানে বেশি ভাল করলি না। তাও খারাপ করতি না। তারপর।

আচ্ছা। তোকে ওঁরা শাস্তি দিল। দুই বছরের জন্য বহিষ্কার। তুই নাকি ব্যাপক ভাঙ্গচুর করেছিলি। সেখানকার টিচারেরা তোকে নিয়ে চারজনকে শাস্তি দিয়েছিল। ঝিকে মেরে বৌকে শিখানোর শাস্তি। তুই নাকি হালকা রাজনীতি ও করতি। তোর বন্ধুরা বলেছে। তোকে কিভাবে দোষী বানাল সেটা তুই জানতি না। অমন ভাংচুরের মধ্যে কত বোকাসোকা ছেলে জোশের চোটে এসব করে। সবাই এগুলো জানে। তোর জ্বর ছিল বলে তুই যাস নি। জ্বর না থাকলে তো যেতিস। কিন্তু তোর নাম এসে গেল। তারপর আর কী। দুই বছর।

আচ্ছা। তোর বিপদে তুই বাবার বুকে মার বুকে আসতে ভয় পেলি কেন রে? আমরা বকতাম। বুকেও টেনে নিতাম। তুই একটা চিঠি লিখে গিয়েছিলি। তোর বন্ধুরা আমাকে এনে দিয়েছে। লেমিনেটিং করে রেখেছি। কিন্তু বাবা, এক লাইনের বেশি পড়তে গেলে আমার মধ্যের সবকিছু ভেসে যায়।

চিঠিটা আমি তোর স্যারদের দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাঁরা আমাকে খুব সম্মান করেছেন। আমি ওঁদের বলেছিলাম, এই সম্মানের একটা ফোঁটা পেলে আমার ছেলেটা বেঁচে যেত। আমার স্বামী বেঁচে যেতেন।