সানুর মা আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। এর আগে দুই চারবার ছিঁড়ে ছিঁড়ে বের হয়ে গেছি। ওরা কিভাবে কিভাবে খুঁজে আমাকে আবার ধরে নিয়ে আসে। এবার বাঁধার দড়িটা খুব মোটা আর শক্ত। তবে উপায় আমি বের করে ফেলব। সানুর মা অনেকদিন ধরে ঘৃণার চোখে ছাড়া আমাকে দেখে না। আমি ওর চোখ বুঝি। কিছুদিন আগে মেয়েটার বিয়ে ভেঙ্গে গেল। সানুর খুব মন খারাপ ছিল। বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে থাকত। মেয়েটা আমার চোখের দিকে তাকায় না। কিছু বলে না। সেদিন ওর মা আমার গালে চড় দিয়ে খুব চিল্লাচিল্লি করল। হারামী হারামী হারামী পাগল। তোমার মত ইবলিশের জন্য মেয়ের মনে হয় বিয়ে পর্যন্ত দিতে পারব না। আমাদের জন্য তোমার একটু মায়া হয় না। মরে যাও প্লিজ। মরে যাও। প্লি- ই-জ। সানুর মা গাল দিতে শুরু করলে অনেক গালাগালি করে। একই কথা বারবার বলে। ওর গালাগাল আমার কাছে খারাপ লাগে। আবার অদ্ভুত প্যাটার্ণের কিছু বাক্যের জন্য হাসি ও পায়। এই যে বলছে মরে যাও প্লিজ। আচ্ছা, মরে যাওয়াটা তো আর দরজা বন্ধ করে বাইরে চলে যাওয়ার মত না। মরে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। আমার মধ্যের হাসি বাইরে দেখাই না। কামড়ে দেব এমন ভঙ্গি করি। অমন মোটকা আমার বউ সানুর মা কিশোরীর মত ভয়ে দূরে সরে যায়। সানু দেখ্ তোর হারামী বাপের কাণ্ড। আমাকে সে কামড়াতে চায়। আমি ঠিক করে ফেলেছি। আমি এবার একদম ঠিক করে ফেলেছি। এ বস্তুকে আর বাসায় রেখে পোষা যাবে না। মেন্টালে দিয়া আসব। ওর কথায় আমি রাগ করি না। যদিও বাইরে মুখ ভয়ঙ্কর করে তাকাই। সানুর মা নিজের ঘরের দরজা অনেক জোরে বন্ধ করে। ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে আবার ধ্বনিতে গিয়ে ঠেকে।
আমার এই রোগ হয়েছে অনেক মিনিট। অনেক ঘন্টা। অনেক দিন। সানুকে আমি ফ্রক পড়তে দেখেছি। তখন থেকে। এখন মেয়েটা শাড়ী পড়ে। আমি আমার মেয়ের আমার বউয়ের সব কষ্ট বুঝি। সব চিন্তা করতে পারি। তবে বাইরে কিছু দেখাতে গেলে ঠিক করে কিছু হয় না। উল্টা হয়ে যায়। মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে আদর করতে গেলে চুলের মুঠি ধরে ফেলি। আমার একটা সমস্যা অনেক আগে থেকে ছিল। তখন বাইরে ঘটানোর মত সাহস কখনো হয় নি। কলেজে কোন রাগী স্যারের ক্লাস করার সময় ছাত্রদের পিনপতন সুনসানের মধ্যে হেঁড়ে গলায় চিল্লান দিতে ইচ্ছা হত। কাউকে অপছন্দ হলে মনে হতো দেই মুখে একদলা থুথু ছিটিয়ে। চাকরি করার সময় অফিসের টেকো বসের স্টেডিয়ামে টোকা দিতে খুব ইচ্ছা করত। একদিন সত্যি সত্যি দিয়ে দিলাম। এরপর থেকে এই নতুন রোগ। যা করতে চাই না তাই করে ফেলি। সানুর মা বোঝে না। মেয়েটাও বোঝে না।
আজ সকালে দড়ি ছিঁড়তে পারলাম। এখন ঘরে কেউ নেই। বাইরে থেকে তালা দেয়া। বিছানায় রাখা অগোছানো দুটা কম্বল নিলাম। কেরোসিনের ডিব্বাটা খালি করে কম্বলগুলোকে স্নান করালাম। দিয়াশলাই পেয়ে গেলাম চুলার কাছে। কম্বলে নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে একটা হাত বের করে রাখি। একটু দূরে কাঠির আগুন গিয়ে পড়ে। এই কয়দিন খুব গরম ছিল। ভেজা কম্বলের শীতে আর একটু দূরের বরফ বরফ এগিয়ে আসা আলো দেখে মনে হল এখন ঘুম দিতে পারব। শান্তিতে।