এসব দুপুরের রোদ আরো কড়া হয়। বাইরের আগুনের হলকা ঘরের মধ্যেও তাপ বিকোয়। রাহেলা এই ক্যাম্পে পড়ে আছে আজ প্রায় তিন মাস। তার নিজের গায়ের ঘামের গন্ধ ঘরের মধ্যে কর্কশ মৌতাত ছড়িয়ে দেয়। বাবা-মা, ছোটভাইয়ের চেহারাগুলো এই তিন মাসে একটু একটু করে আরো ঝাপসা হয়। প্রাণ বাঁচানোর একাগ্র সব আর্তনাদ কানে এখন আর গাঢ়ভাবে এসে লাগে না।
রাহেলাকে তুলে আনা হয় তার গ্রাম থেকে। পালাতে থাকা লোকজনের দিকে মশার ঝাঁকের মতো গুলি কাউকে না কাউকে হত না করে থামে না। বাবা-মা, ভাই গুলিতে মরেছে কি আগুনে পুড়ে মরেছে সেটার সঠিক কিনারা করার আগে তার জ্ঞান চলে যায়। জঘন্যতম গালাগালি, শরীরের ওপর বিশ্রীভাবে কচলানো হাত, গুলির শব্দ, আগুন আরো আরো কি কি যেন মিশে ভেসে ভেসে তার প্রবেশ ঘটে তেপান্তরের দোজখে। উলঙ্গতা একসময় স্বাভাবিক হয়ে আসে। ধর্ষণ হয়ে পড়ে বিরতিহীন। আর ক্রমাগত বীভৎসতর। ধর্ষণের সময় তাকে বলা হয় অনুগত কুত্তির মতো আচরণ করতে। রাহেলা বুঝে না বুঝে সেটাই করতে থাকে। এক আর্মি মেজর ধর্ষণ করতে করতে একদিন জানায়, এই সেক্স-স্লেইভারির অল্প কষ্ট সহ্য করে করে তার রক্তশুদ্ধি হয়ে যাচ্ছে।
রাহেলা প্রাণে বেঁচে যায়। দেশ একসময় স্বাধীন হয়। পরিশুদ্ধ রক্তের মানে বুঝতে গিয়ে রাহেলা কোনো এক দুপুরে নিজের দেহের রক্তপাত ঘটায়। লাল রক্ত ধীরেসুস্থে জমাট কালো হয়ে পড়ে।