সাধারণত ভোরে উঠি না। ভোরে কখনো ঘুম ভেঙ্গে গেলে বাথরুমে যাবার চাপ না থাকলে শুয়ে গড়িয়ে সময়টা পার করি। আকাশ রোদের দখলে চলে গেলে আস্তে ধীরে উঠি। দাঁত মাজি। ফেন্সিডিল মাঝেমধ্যে খাই বলে বাথরুমে বেশ কসরত করতে হয়। পরে সব সেরে বেরোই। লিকার চা বানাই। তবে অনেক চামচ চিনি।
প্রথম আলো টেবিলে থাকে। আর থাকে টোস্ট করা পাউরুটি, সাথে নোসিলা। প্রতিদিনের ব্রেকফাস্ট একই। খেতে খেতে পেপার পড়ি। ছুটি জাতীয় কারণে পেপার না পেলে আগেরদিনের পেপার নতুন মনে করে পড়ি।
ফারজানা থাকার সময় আমার রুটিন ব্রেকফাস্টে মাঝে মাঝে নতুন কিছু ঢোকে। ওর এসব কাজ খুব একটা পছন্দ হয় না। ডিমপোচ। দুধ-চা। আমি ওকে বলি- শো্নো নতুন কিছু আমার ভাল্লাগে না। নোসিলা-পাউরুটি ভালো লাগে- সেটাই খাই। তোমার যা মন চায় তুমি খাও। আমারে দিতে চেষ্টা করো না। ফারজানা এসব কথায় গা না করে আমাকে অন্য খাবারে অভ্যস্ত করানোর চেষ্টা চালায়। আমাকে দখল করে আমার মধ্যে থাকা মানুষটার খোলনলচে বদলানোর একটা জেদ হয় ওর। আমার ড্রাগ নেয়া, বন্ধুদের সাথে অশ্লীল আড্ডাবাজি, রাত করে ফেরা, কোনো কাজ না করে বাপের পয়সায় চলা। সবকিছু ফারজানা পাল্টে দিতে চায়। চুপ থেকে পরদিন আগের মতোই শুরু হয়।
ফারজানাকে আমি অপছন্দ করি তা নয়। ঘুমিয়ে গেলে ওর চোখে লাগানো কাজল আমি মন দিয়ে দেখি। আলতো করে ছোঁয়ার খুব ইচ্ছে ঢোক গিলে হজম করি। ওর সাথে আমার ওসব হয় না। ফারজানা একবার উদ্যোগী হয়েছিল। পরে কেন যেন হয়নি। একবার আমাকে জড়তা ভেঙে জিজ্ঞেস করে ফেলে- তুমি কি গে? ওকে আশ্বস্ত করি না বলে। তাহলে? তখন চুপ থাকি।
ওর সাথে আমার ডিভোর্স হয় এক বছর তিন মাসের মাথায়। এর পরদিন বেশ ভোরে ঘুম ভাঙে। বিছানায় শুয়ে না থেকে বারান্দায় গিয়ে দেখি আকাশে অল্প অল্প আলো। কেন জানি দুধ-চায়ের তৃষ্ণা পায়। তবে লিকার-চা করি। প্রচুর চিনি দিয়ে।
ফিরে: আন্তেনিও গ্রামসির ‘দা মডার্ন প্রিন্স এন্ড আদার রাইটিংগস্’ হাতে পেয়েছিলাম মাস দেড়েক আগে। পড়তে পড়তে ‘দা ফরমেশন অব ইন্টেলেকচুয়ালস্’ প্রবন্ধটা কিছুটা অনুবাদ শুরু করি। পরে সেসব বাদ দিয়ে একই ওয়ার্ড ফাইলে একটা টুকুন গল্প লিখে ফেলি। গল্পের নাম দেই দা মডার্ন প্রিন্স।