নয়ন খালি একই খোয়াব দেখে। তার কাম কাজ বিশেষ কিছু নেই। লোকে তার সাথে খুব একটা মেশে না। সে নিজেও কারো সাথে মেশার চেষ্টা করে কিনা বলা মুশকিল। তার মধ্যে কোন নতুন কথা নাই। সব একই, গৎবাঁধা অপ্রয়োজনীয় কথা। চেকভের গল্পের এক চরিত্রের মত সবাই যা জানে সেরকম কথাই সে ঘুরেফিরে বলে। শীতকালে তার মুখে শোনা যায়- হ্যাঁ, শীতকালে খুব ঠাণ্ডা পড়ে। সোয়েটার বা গরম কাপড় না পরে বেরোলে আরো কষ্ট হয়। তাই সবাই গরম কাপড় পরে। গরমকালে বলে- গরম পড়ে গেছে। রোদে গেলে গা পুড়ে যায়। হাঁটা মুশকিল। বাগানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কারো সাথে দেখা হলে বলতে শোনা যায়- এই যে দেখছেন - গাছ। এরা হাঁটতে পারে না। গাছের কাণ্ড থাকে, পাতা থাকে। কিছু কিছু বড় গাছে পাখি বাসা করে। কাউকে না পেলে একা একা যা বিড়বিড় করে সেখানেও নতুন কিছু থাকে না। পাশের বাড়ির পিচ্চি রিও একবার আড়ি পেতে নয়নের সোলিলাকুই শুনেছিল। আমার নাম নয়ন। আমি এখানে একা থাকি। আমাদের বাড়িতে জানালা আছে, দরজা আছে। বাড়িটা দেখতে বাড়ির মত। আমরা পাড়ার ছেলেরা নয়নকে দেখলে সামনে হাসি, আড়ালে হাসি। তার একটা নাম ও দেয়া হয়েছে। ‘হগলে-জানে নয়ন্যা’।
নয়নের সবাই জানে এরকম কথা বলার বাতিকের সাথে আরেকটা বাতিক প্রায় রোগ পর্যায়ে চলে গেছে। পেপার পড়ার বাতিক। দৈনিক পত্রিকার প্রতিটা শব্দ কি বাক্য সে মন দিয়ে পড়ে। আত্মস্থ করে। পড়া শেষে প্রায়শ একই বাক্য তার মুখে শোনা যায়। কোন নতুন খবর নাই। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে সেই একই রকমের খবর স্নো পাউডার মাখিয়ে হাজির করলেও নয়নের কাছে সব ধরা পড়ে যায়। মানুষ ভাল আছে। মানুষ ভাল নেই। মানুষ কিরকম আছে মানুষেরা তা মালুম করতে পারছে না। ব্যক্তিমানুষের এই তিন অবস্থার বাইরের একটা নতুন খবরের জন্য প্রতিদিনের পত্রিকার সব খবর চষার পরে নয়ন হতাশ হয়। মুখে গৎবাঁধা সেই একই কথা শোনা যায়। কোন নতুন খবর নাই। কোন নতুন খবর নাই। কোন নতুন খবর নাই।