পুরানো একজন মানুষ মারা গেছেন। আমাদের শহরে পুরানো মানুষদের কোন কবরস্থান নেই। তাদের মৃতদেহ রেখে দেয়া হয় নগরের একটা আটতলা উঁচু বিল্ডিং-এর ছাদে। শকুনেরা কাকেরা খুবলে খায়। জোয়ান কেউ মারা গেলে কেবল তাদের কবর হয়। পুরানোরা মরার পর মাংস বিলোয়।
লোকটার অনেক বয়েস। নব্বই হবে প্রায়। তার ছেলে বৌমা ছটফটে নাতি অতুল এক দিন সকালে এসে দেখে বুড়ো টেঁসে পড়ে আছে। পরে শব সমিতি দেহটাকে রেখে আসে সেই ছাদে। মাংস গলে যায় তেতো রোদে। আস্তে আস্তে এসে ভিড়তে থাকে এক দুটো শকুন। সংখ্যায় তারা আরো বাড়তে থাকে। দেহ অদৃশ্য হয়ে যায় ডানায়। ডানার শব্দে।
অতুল তার দুটো হাত বাবা মায়ের দুটো হাতে রেখে হাঁটে। ও তোমাদের কে হয়? অতুলের প্রশ্নে বুড়োর ছেলে বলে – কেউ হয় না, বাবা। একজন পুরানো মানুষ। একটু দূরে আইসক্রিমের গাড়ি দেখে অতুল বাবা মা’র হাত ছেড়ে দৌঁড় দেয় সেদিকে। বুড়োর ছেলে একটা চকোবার কিনে দেয় ছেলেকে। আইসক্রিমে কামড় দিয়ে বাবার দিকে আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে। আচ্ছা, ছাদের পাখিগুলোর ঠোঁট এত লাল কেন?
ভূতের গলি নিয়ে যা বলার শহীদুল জহির বলে ফেলেছেন। আমি নিজে ভূতের গলিতে থাকি। মহল্লার দোকানে ডালপুরি কি আলুপুরিতে কামড় দিতে গেলে আব্দুল আজিজ ব্যাপারি কি আব্দুল করিমের কথা মনে পড়ে। খাটে শুলে ভূতের গলির অদেখা বান্দরগুলো আমার জানালায় ফুচি মারে ভেবে নিই। আমি পড়ি। শহীদুল জহিররে বারবার পড়ি। পড়ে আমার নিজের কথা কি ভাষা প্যাঁচগোচ খেয়ে উনার পথ ধরে।
আমার সাথে লীনার কথা, লীনারে নিয়ে আমার ভূতের গলির কথা আমি টুকটাক ভেবে নিই। ভেবে নিয়ে আমি দিনের কথা ভাবি। রাতের কথা ভাবি। লিখতে গিয়ে আবারো সেই একই ভাষা আমার শরীরে খাউজায়, চুলকায়। ডলু নদীর হাওয়া ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করি। চারতলার বাসার ছাদ থেকে পাতাগুলো নিচে উড়ায়ে দিই। নিচে পড়তে বেশি সময় লাগে না। রিকশার আরোহীর মাথায় পড়ামাত্র ‘কুন খানকির পোলারে’ বলে উপরে তাকাতে গেলেই আমি অকস্মাৎ মাথা সরিয়ে নেই। স্মিত হাসি।
তারপর কয়েকদিন কিছু পড়ি না। ডালপুরি খেতে গেলে শহীদুল জহিররে মনে পড়বে ভেবে সমুচা চালাই সারাক্ষণ। লীনার কথা ভাবি। লীনারে নিয়ে আমার ভালবাসার কথা কিছু লিখতে গেলে ভাষার দিকে তাকিয়ে দেখি –আবে হালায় …